মহানগর সময় ‘দেশি-বিদেশি কোম্পানি কিশোর-যুবকদের তামাকে উদ্বুদ্ধ করছে’
২৭-০২-২০২১, ২০:৪৫
সময় নিউজ প্রতিবেদক

দেশি ও বিদেশি তামাক কোম্পানিগুলো কিশোর-যুবকদের তামাক ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করতে আইন লঙ্ঘন করে প্রচারণা চালাচ্ছে। পাশাপাশি সস্তা তামাকজাত দ্রব্যের কারণে মানুষ তামাক ব্যবহারেও উদ্বুদ্ধ হচ্ছে, যা সরকারের ২০৪০ সালে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ায় ব্যাহত করবে। কিশোর ও যুবকদের মাদকের প্রবেশদ্বার তামাক হতে বিরত রাখতে, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন এবং তামাকজাত দ্রব্যের মূল্য বাড়াতে সুনির্দিষ্ট কর আরোপ জরুরি। দেশে প্রথম বারের মতো আয়োজিত তামাক বিরোধী এক সম্মেলনে আলোচক ও বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
শনিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে প্রথমবারের মতো আয়োজিত ‘ঢাকা কনফারেন্স অন টোবাকো অর হেল্থ-২০২০’ শীর্ষ জাতীয় সম্মেলন।
সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিরা বিভিন্ন গবেষণার আলোকে ঢাকা তামাক নিয়ন্ত্রণ ঘোষণার মাধ্যমে সরকারের কাছে বিভিন্ন দাবি জানান।
সম্মেলনের সারা দেশের ১২০ বেশি সংগঠনের ২৫০ প্রতিনিধিরা অংশগ্রহণ করে, যাতে ২০টি মৌখিক এবং পোষ্টারে মাধ্যমে ২৮টি গবেষণা প্রবন্ধ উপস্থাপিত হয়।
সম্মেলনে প্লানারি সেশনে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মোহাম্মদ রুহুল কুদ্দুসের সভাপতিত্বে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য সচিব এবং স্পেশাল এনভয় অফ ক্লাইমেট ভালনারেবল ফোরাম আবুল কালাম আজাদ।
সম্মেলনে আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের স্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক ইকবাল মাসুদ এবং বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট-র সমন্বয়কারী সাইফুদ্দিন আহমেদ।
সভায় ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য (ব্যবহার) নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৫ সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ।
তারা আইন সংশোধনের মাধ্যমে ই-সিগারেট, ভেপিং এর উৎপাদন, বিতরণ, বিপণন, ক্রয়-বিক্রয়, ব্যবহার নিষিদ্ধ করার দাবি জানায়।
ধুমপানের নির্ধারিত স্থানের বিধান বাতিলসহ পাবলিক প্লেস এবং গণ পরিবহনে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে তামাকজাত কোম্পানির যেকোন প্রচারণা কার্যক্রম, বিক্রয়স্থলে তামাকজাত দ্রব্যের প্রদর্শন নিষিদ্ধের দাবি করা হয়।
তামাকজাত দ্রব্যে বিক্রয়ে লাইসেন্সিং তৈরি, ছবিসহ স্বাস্থ্য সতর্কবার্তা বৃদ্ধি, খুচরা বিক্রয় নিষিদ্ধ, মোড়কে উৎপাদনের তারিখ নিশ্চিত, ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্যের স্ট্যার্ন্ডাড মোড়ক ব্যবস্থা নিশ্চিত, তামাক কোম্পানি প্রভাব বন্ধে নীতিমালা প্রণয়ন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনভঙ্গের ক্ষেত্রে সরাসরি মামলা দায়ের করার বিধানযুক্ত করা এবং আইনের সকল বিধানে উল্লেখিত জরিমানার পরিমান বৃদ্ধি করার সুপারিশ করা হয়।
সাবেক রাষ্ট্রদুত ও সম্মেলনে আহবায়ক কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সরাসরি ও ভার্চুয়াল যুক্ত অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, ব্লুমবার্গ ফিলোনথপিক্স-র জনস্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক কেলি হেনিং, দি ইউনিয়নের তামাক নিয়ন্ত্রণ বিভাগের পরিচালক গেন কোয়ান, ভাইটাল স্ট্যাটেজিস-র রেবেকা পল, জন্সহপকিন্স ইউনিভার্সিটি ব্লুমবাগ স্কুল অব পাবলিক হেলথের পরিচালক জোয়ানা কোহেন, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের সমন্বয়কারী ও স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের যুগ্মসচিব জিল্লুর রহমান চৌধুরী, ডা. হাবিবে মিল্লাত এমপি, ব্যারিষ্টার শামীম হায়দার এমপি, অ্যারোমা দত্ত এমপি। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ডাসের উপদেষ্টা আমিনুল ইসলাম বকুল।
সমাপনী অনুষ্ঠানে নাটাবের প্রেসিডেন্ট মোজাফ্ফর আহমেদ সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব কাজী জেবুন্নেছা বেগম, অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আশিষ পান্ডে, ডেপুটি পরিচালক, দি ইউনিয়ন ও কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম, ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন সম্মেলনের সদস্য সচিব একেএম মাকদুস।
সম্মেলনে আগামী ২০৪০ সালে মধ্যে তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে ঢাকা তামাক নিয়ন্ত্রণ ঘোষণায় সরকারের কাছে ১৬ টি দাবি উপস্থাপন করা হয়, যার মধ্যে তামাক কোম্পানির দেশি এবং বিদেশি বিনিয়োগ নিরুৎসাহিত নীতি প্রণয়ন বা বিদ্যমান নীতিতে যুক্ত করা, খসড়া জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচী চুড়ান্ত, খসড়া জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি গ্রহণ, খসড়া জাতীয় তামাক চাষ নিয়ন্ত্রণ নীতি অনুমোদন, কর বৃদ্ধির মাধ্যমে তামাক ব্যবহার কমিয়ে আনতে দেশে একটি জাতীয় কর নীতি প্রণয়ন করা, নীতিতে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ বন্ধে আর্টিকেল ৫.৩ অনুসারে প্রণীত খসড়া গাইড লাইন অনুমোদন, টেকসই বা অব্যাহত অর্থায়নের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা শক্তিশালীকরণে ‘হেলথ প্রমোশন ফাউন্ডেশন’ গঠন করা, তামাক কোম্পানির বেআইনী কার্যক্রম বন্ধে বিদ্যমান আইন অনুসারে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে অর্গানোগ্রাম চুড়ান্ত, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের টোব্যাকো ট্যাক্স সেলকে শক্তিশালী করা, তামাকজাত দ্রব্যের জটিল কর কাঠামো বিলুপ্ত করে, তামাকজাত দ্রব্যের উপর সুনির্দিষ্ট কর আরোপ করার সুপারিশ করা হয়।
সম্মেলনে গবেষণা সেশনগুলোতে উপস্থিত ছিলেন- ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের বিভাগীয় প্রধান (রিসার্চ এন্ড এপিডেমিওলজি) প্রফেসর ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী,বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির প্রকল্প পরিচালক (তামাক নিয়ন্ত্রণ) প্রফেসর ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ইসরাত চৌধুরী, দ্য ইউনিয়নের যুগ্ম-সচিব ও টেকনিক্যাল কলসানটেন্ট হামিদুর রহমান খান, বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী মোহাম্মাদ শাহজাহান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক ড. রুমানা হক, বাংলাদেশ সেন্টার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রামের সহকারি পরিচালক ও টিম লিডার (তামাক নিয়ন্ত্রণ প্রকল্প) মোহাম্মদ শামীমুল ইসলাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এসএম আবদুল্লাহ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশনের প্রোগ্রাম ফাউন্ডেশন ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও প্রত্যাশার সেক্রেটারী জেনারেল হেলাল আহমেদ প্রমুখ।