মহানগর সময় অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার নিয়ে সাবধান করলেন প্রধানমন্ত্রী
২৬-০১-২০২১, ২৩:১২
ওয়েব ডেস্ক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বিশ্বব্যাপী অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার কমাতে না পারলে, নীরবে যে অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হবে তা মানব সম্প্রদায়ের জন্য বড় হুমকি হয়ে উঠতে পারে ভবিষ্যতে।
মঙ্গলবার (২৬ জানুয়ারি) বিকেলে ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপ অন অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স শীর্ষক একটি বৈঠকের উদ্বোধনী পর্বে (পূর্বে ধারণকৃত) ভিডিওবার্তায় এই কথা বলেন তিনি। এ সময় সংকট উত্তরণে ছয় দফা প্রস্তাবও উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ভার্চুয়াল এই বৈঠকে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিসট্যান্স বা এএমআর এর আইন বাস্তবায়ন এবং প্রেসক্রিপশন ছাড়া যত্রতত্র অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধের ব্যবহার বন্ধ ও এই সংক্রান্ত গবেষণা বাড়ানোর তাগিদ দেন সরকার প্রধান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, গেল এক বছরেরও বেশি সময় ধরে বিশ্বে মানব সম্প্রদায় গুরুতর এক হুমকির মুখোমুখি হয়েছে কোভিড-১৯ ভাইরাসের কারণে। ধীরে ধীরে নীরবে ছড়াতে থাকা অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী পরিস্থিতি আধুনিক ওষুধের সব উপযোগিতা নষ্ট করে দিতে পারে ভবিষ্যতে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা যদি এখনই অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করতে না পারি ভবিষ্যতে আরো বেশি এবং ভয়াবহ ও মর্মান্তিক মহামারী দেখতে হতে পারে বিশ্ব সম্প্রদায়কে। এখনই পদক্ষেপ না নিলে পরিস্থিতি দিন দিন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO), বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (FAO) এবং ওআইই যৌথভাবে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় এই সম্মেলনের আয়োজন করে। বার্বাডোজ এর প্রধানমন্ত্রী মিয়া আমর মটলি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মহাপরিচালক এবং বিশ্ব খাদ্য ও কৃষি সংস্থার নীতিনির্ধারকরা বৈঠকে বক্তব্য রাখেন।
ওয়ান হেলথ গ্লোবাল লিডার্স গ্রুপের কো-চেয়ারের দায়িত্বে থাকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার রোধের কথা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৯৮ সালের প্রস্তাবনায় জোর দিয়ে বলা হলেও, বিশ্ব এখনো সেই লক্ষ্য পূরণের মাইলফলক থেকে অনেক দূরে। তাই এখনই শুধু মানব স্বাস্থ্যে নয়, গবাদিপশু, মৎস ও কৃষিখাতে অ্যান্টিবায়োটিকের যৌক্তিক ও পরিমিত ব্যবহারের নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে এগিয়ে আসতে হবে বিশ্বকে।
এ সময় বৈঠকে সম্ভাব্য দুর্যোগ প্রতিরোধে ছয়দফা প্রস্তাব উত্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এসব প্রস্তাবনায় তিনি বলেন,
প্রথম প্রস্তাব: অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এজেন্টস এর উৎপাদন, মান নিয়ন্ত্রণ ও বিপণনে কঠোর ভাবে আইন ও বিধিমালার বাস্তবায়ন করতে হবে।
দ্বিতীয় প্রস্তাব: অ্যান্টিবায়োটিক সংক্রান্ত গবেষণাগার ভিত্তিক নজরদারি পদ্ধতি বাস্তবায়ন করতে হবে মানবদেহ, মৎস ও কৃষিখাতে।
তৃতীয় প্রস্তাব: প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ওষুধ ব্যবহার কঠোরভাবে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা প্রয়োজন।
চতুর্থ প্রস্তাব: এই খাতে মৌলিক ও প্রায়োগিক গবেষণা ও প্রয়োজনীয় বাজেট বরাদ্দ রাখতে হবে।
পঞ্চম প্রস্তাব: অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল এর ক্ষতি সম্পর্কে সামাজিকভাবে সচেতনতা তৈরি করার উদ্যোগ নিতে হবে।
ষষ্ঠ প্রস্তাব: রাজনৈতিক সদিচ্ছা নিয়ে বিশ্ব নেতৃবৃন্দকে এটি বাস্তবায়নে কার্যকর ভাবে সহায়তা করতে এগিয়ে আসতে হবে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ও জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচিসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক সব ফোরামকেই।
উচ্চ পর্যায়ের এই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি সবার সমন্বিত উদ্যোগে বর্তমান কঠিন পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হবে।’