মহানগর সময় ‘কখনো বিএনপির কর্মী কখনো দিনমজুর’, মিথ্যা তথ্যে আ.লীগ নেতার জামিন জালিয়াতি!
১৯-০১-২০২১, ২১:০৩
আফজাল হোসেন

সোনা ও বিদেশি মুদ্রা পাচারের অভিযোগে গ্রেফতারি পরোয়ানা ও ইমিগ্রেশনে রেড অ্যালার্ট জারি থাকা শেখ রনি আহমেদ ওরফে বাদল আইনের চোখে পলাতক। গোপালগঞ্জের মকসুদপুরের নওখন্ড গ্রামের আয়নাল হকের ছেলে রনি ওরফে বাদল স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা হিসেবেই পরিচিত।
রনির আপন চার ভাই সাইফুল ইসলাম, কামরুল হাসান, পিকুল শেখ, শেখ আহমেদ ওরফে শামীম আহমেদ রাজধানীর বিমানবন্দর থানায় একাধিক সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রা চোরাচালান মামলার আসামি। তবে উচ্চ ও নিম্ন আদালত থেকে নিয়মিত জামিন পেয়ে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা।
অভিযোগ রয়েছে, আর আগাম জামিন পেতে উচ্চ আদালতে নিজেদের পরিচয় দেন উচ্চ শিক্ষিত সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য ও স্থানীয় (গোপালগঞ্জ) বিএনপির নেতাকর্মী হিসেবে। রাজনৈতিকভাবে হয়রানি করতে প্রতিপক্ষের ষড়যন্ত্রমূলক মামলা এমন তথ্য দিয়ে হাইকোর্টের একটি দ্বৈতবেঞ্চ থেকে জামিনও পায় তারা।
আর নিম্ন আদালতে হাজির হয়ে জামিন পেতে নিজেদের পরিচয় দেন হত দরিদ্র, অশিক্ষিত দিনমজুর হিসেবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ঘটনার শুরু রনি ওরফে বাদলের খালাতো ভাই বাবুল আক্তার ও চাচাতো ভাই ফায়েক শেখ ওরফে এমরান অবৈধভাবে আনা সোনাসহ গ্রেফতার হওয়ার মধ্য দিয়ে। ২০১৮ সালে পৃথক দুই ঘটনায় অবৈধভাবে সোনা আনতে গিয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে কাস্টমসের হাতে গ্রেফতার হন বাবুল ও এমরান।
উভয় ঘটনায় বিমানবন্দর থানায় এ দুজনের বিরুদ্ধে পৃথক দুই সোনা চোরাচালান মামলায় পুলিশ তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে। জিজ্ঞাসাবাদে দুজনই সোনা চোরাচালানের মূল হোতা হিসেবে স্বীকার করে গোপালগঞ্জের মকসুদপুরের পশ্চিম নওখন্ড গ্রামের শেখ রনি আহমেদ ওরফে বাদল ও তার চার ভাইয়ের নাম। এ ঘটনায় পুলিশ দুই মামলাতেই রনি ও তার বাকি চারভাইসহ অন্যদের আসামি করে।
দুই মামলার একটিতে ২০১৯ সালের ৩০ এপ্রিল অভিযুক্তরা আগাম জামিন নেয় হাইকোর্টের একটি দ্বৈত বেঞ্চ থেকে। যেখানে উল্লেখ করেন, তারা বিএনপি নেতাকর্মী। তাদের রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্য এ মামলা করা হয়েছে। এসময় গোপন করা হয় ১৬৪ ধারার জবানবন্দিও। জামিন পেয়ে দীর্ঘদিন পলাতক ছিলেন আসামিরা।
আগাম জামিনের এক বছর ৭ মাস পর ২০২০ সালের ১৮ ডিসেম্বর ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের (সিএমএম) আদালত থেকে করোনার অজুহাত দেখিয়ে জামিন নেন তারা। হাইকোর্টের আবেদন নিজেদের উচ্চ শিক্ষিত দাবি করলেও, সিএমএম কোর্টের আবেদনে গরিব দিন মজুর হিসেবে মিথ্যা তথ্য দেন এই রনি ওরফে বাদল ও তার বাকি চার ভাই আসামি।
তবে এমন জামিন জালিয়াতির বিষয়টি অস্বীকার করেছেন আইনজীবী মাসুদুল হক। তার দাবি, নিয়ম মেনেই জামিন পেয়েছেন তার মক্কেলেরা।
বর্তমানে সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রা চোরাচালান পৃথক দুই মামলায় রনি সিন্ডিকেটের দুই সদস্য বাবুল আক্তার ও ফায়েক শেখ ওরফ এমরান জেলহাজতে রয়েছে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, বিমানবন্দর থানায় ফায়েক ওরফে এমরানের সোনা চোরাচালান মামলায় ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ এর বি এর ১ ধারা সংযুক্ত করা হয়। মামলায় এমরানের জবানবন্দিতে সোনাচোরাচালানের মূল হোতা হিসেবে শেখ রনি আহমেদ ওরফে বাদল ও সিন্ডিকেটের বাকি সদস্য রনির আপন চার ভাই সাইফুল ইসলাম, কামরুল হাসান, পিকুল শেখ, শেখ আহমেদ ওরফে শামীম আহমেদ, রনির ভগ্নিপতি কাজী হাবিবুর রহমান, খালাতো ভাই বাবুল আক্তার ও দূরসম্পর্কে আত্মীয় রাজীব মিনারের নাম স্বীকার করে।
তবে এমন জামিন জালিয়াতি দেখে হতবাক রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যার্টনি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন।
তিনি বলেন, জালিয়াতি করে জামিন নিয়ে আসামিরা ফৌজাদারি অপরাধ করেছেন। তাদের জামিন বাতিলের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে জানান অ্যাটর্নি জেনারেল।
অভিযোগ রয়েছে মামলার অন্যতম আসামি এবং সোনা ও বৈদেশিক মুদ্রা চোরাচালানের মূল হোতা রনি শেখ ওরফে বাদল ভিন্ন ভিন্ন জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্টের মাধ্যমে পরিচয় গোপন করে রয়েছেন আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ধরাছোয়ার বাইরে।