বাণিজ্য সময় একসঙ্গে দুই স্বপ্ন পূরণ উদ্যোক্তা ফারজানার
১৪-০১-২০২১, ১৮:১৮
পলাশ মাহমুদ

বাবা কলেজ শিক্ষক। তাই ছোট বেলা থেকে মেয়েরও স্বপ্ন ছিল শিক্ষক হওয়ার। অবশ্য সেই স্বপ্ন বৃথা যায়নি। তবে তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরও একটি স্বপ্ন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা উৎসাহ দিতেন ব্যবসায়ী বা উদ্যোক্তা হওয়ার। বাবার শিক্ষকতার অনুপ্রেরণা আর শিক্ষকদের দেওয়া উদ্যোক্তা হওয়ার উৎসাহ; দুটিকেই স্বপ্ন হিসেবে নিয়েছেন ফারজানা নাসরিন। দুটি স্বপ্নই পূরণ হয়েছে তার।
ফারজানার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরের কালিশঙ্করপুর। বাবা স্থানীয় সরকারি পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষক। এখান থেকেই মাধ্যমিক পড়াশোনা। কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে ২০১০ সালে স্নাতক ও ২০১২ সালে স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করেন।
বাবাকে দেখে ছোট বেলা থেকেই ফারজানার আগ্রহ শিক্ষক হওয়ার। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ভর্তি হওয়ার পর নতুন স্বপ্ন শুরু হয়। শিক্ষকরা উৎসাহ দিতে থাকেন ব্যবসায়ী হওয়ার। শিক্ষকদের কথায় অনুপ্রাণিত হয়ে ব্যবসা নিয়ে স্বপ্ন দেখতে থাকেন ফারজানা।
নিজ অফিসে কর্মব্যস্ত ফারাজান। ছবি: ফারজানা।
এর মধ্যে ছাত্রজীবনেই বিয়ে হয় ফারজানার। এক দিকে সংসার অন্যদিকে লেখাপড়া। সঙ্গে উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা। ফারজানাকে ছুটতে তিনদিকে। পড়াশোনা শেষ করে কুষ্টিয়া ছাড়তে হয়। স্বামী সরকারি কর্মকর্তা। তার পোস্টিং যশোরে হওয়ায় সেখানেই যেতে হয়।
মেধাবী ফারাজান উদ্যোক্তা হওয়ার চেষ্টা করার পাশাপাশি বাবাকে দেখে গড়ে ওঠা স্বপ্ন বাস্তবায়নে শিক্ষক হওয়ারও চেষ্টা করতে থাকেন। লেখাপড়া শেষ করার পর স্থানীয় একটি কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। শিক্ষকতার চাকরি হওয়ায় একটি স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তার। এবার চেষ্টা দ্বিতীয় স্বপ্ন বাস্তবায়নের।
২০১৮ সালে ছোট্ট পরিসরে অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা শুরু করেন ফারজানা। হাতের কাজের পোশাক নিয়ে কাজ শুরু হয় তার। নাম দেন, ‘এল এন্ড এল হ্যান্ডিক্রাফ্ট’। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রয়েছে তিনি। শুরু থেকেই বাবা-মা, স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি সবাই সহায়তা করছে তাকে। তবে ব্যবসা দাঁড় করাতে গিয়ে বেশ পরিশ্রম করতে হয়েছে।
সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে ফারাজানার ব্যবসায়ীক কার্যক্রম: ছবি: সংগৃহীত।
ফারজানা বলেন, যখন কাজ শুরু করলাম তখন কর্মী খোঁজা, কাঁচামাল সংগ্রহ, ক্রেতা তৈরিসহ নানা বিষয়ে ধকল শুরু হয়। শুরুতে কয়েকজন কর্মী আর অল্প কিছু কাপড় ও সুতা নিয়ে পোশাক তৈরি শুরু করি।
তবে ব্যবসা শুরু করতেই আশে-পাশের বহু মানুষের নেতিবাচক মনোভাবের শিকার হতে হয়েছে ফারজানাকে। তাঁর কথায়, অনেক অনেক বাঁধা,মানুষের নেগেটিভ কথা, মানুষের হিংসা, এসবের ভারে মনে হলো আমি পারবো না। সব বন্ধ হয়ে যাবে। ঠিক তখন ঢাল হয়ে দাঁড়াল আমার স্বামী। ওই সময় থেকে তার সহায়তা না থাকলে ব্যবসাটা দাঁড় করাতে পারতাম না।
‘এল এন্ড এল হ্যান্ডিক্রাফ্ট’ এর বর্তমান পণ্যের মধ্যে হাতের কাজের জামদানি শাড়ি, ড্রেস, অন্যান্য হাতের কাজের টুপিস, থ্রি পিস,বেবি ড্রেস, পাঞ্জাবি, হাতের কাজের শাড়ি, হিজাব বিক্রি হয় বেশি। শুরুতে প্রথম অর্ডারে বিক্রি ছিল ৬ হাজার ৫০০ টাকা। বর্তমানে মাসে বিক্রি বহুগুণ বেড়েছে। তবে সঠিক কত তা প্রকাশ করতে চাননি তিনি।
স্বামীর সঙ্গে ফারজানা। ফারজানার স্বামী মোতাছিম বিল্লাহ রিপনও একজন শিক্ষক। ছবি: সংগৃহীত।
ঘরে বসে একজন নারী হিসেবে মাসে লাখ টাকার বেশি পণ্য বিক্রি করতে পেরে দারুণ খুশি ফারাজান। তার ‘এল এন্ড এল হ্যান্ডিক্রাফ্ট’-এর ব্যবসা দিন দিন বড় হচ্ছে। ফারাজানা বলেন, আমার ব্যবসার বয়স দুই বছর। এই অল্প সময়ের মধ্যে এখন আমার অনেক কর্মী, সুপারভাইজার, ডেলিভারিম্যান আছে। বর্তমানে আমার পণ্য দেশের বিভিন্ন শোরুম, ব্রান্ডেড শোরুমসহ বিভিন্ন অনলাইন পেজে যায়। শুরুটা ছোট হলেও এখন সামনে এগিয়ে যাচ্ছি।
ফারজানা বলেন, একজন মেয়ে হিসেবে আমি ছোট বেলা থেকে যে স্বপ্ন দেখেছি এবং ছাত্রজীবন থেকে যে নতুন স্বপ্ন দেখেছি দুটিই পূরণ করতে পারছি। এজন্য আমার বাবা-মা, শিক্ষক, স্বামী, শ্বশুর-শাশুড়ি, বিশেষ করে আমার এসএসসি ০৩ ও এইচএসসি ০৫ ব্যাচের বন্ধুরা যারা সহযোগিতা করেছেন ও করছেন সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।