বাংলার সময় পালিয়ে বিয়ে: স্কুলছাত্রীর শিকলবন্দি জীবনের ভিডিও ভাইরাল
১৩-১২-২০২০, ১৮:৪৮
মফিজুর রহমান রিপন

শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার সখিপুরের এক স্কুলছাত্রীর শিকলবন্দি ভিডিও ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। তার বাড়ি সখিপুর থানার চরকুমারিয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের লক্ষ্মী নারায়ণপুর গ্রামে।
মেয়েটির সঙ্গে প্রতিবেশী হাসান মালতের ছেলে আহাম্মদ আলী মালতের (২১) প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এ সম্পর্ক ধরেই চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর আহাম্মদ-শোভা পালিয়ে যান। ছেলের পরিবারের দাবি, কাবিন রেজিস্ট্রি ছাড়া বিয়ে করেছে তারা।
তারপরও ছেলের পরিবার মেয়েটিকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নেয়। কিন্তু শোভার পরিবারের দাবি, তাদের মেয়ের বয়স কম এবং ছেলেটি মাদকাসক্ত। তাই বিয়েটি মেনে নেওয়া যায় না। তারা আইনি প্রক্রিয়ায় মেয়েকে উদ্ধার করে আনেন। বাড়িতে ফিরিয়ে আনার পর দেখতে পায় মেয়েটি মানসিক ভারসাম্যহীনের মতো আচরণ করছে।
তাই মেয়ের বাবা তাকে ঘরের একটি কক্ষে খাটের সঙ্গে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখেন। আর সেই শিকলবন্দি ভিডিওটিই ভাইরাল হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ ডিসেম্বর) থেকে শেখ নজরুল ইসলাম নামে একটি ফেসবুক আইডিতে ভিডিওটি প্রথম দেখা যায়। এরপর শেয়ার করা হচ্ছে একের পর এক।
সখিপুর থানা পুলিশ জানায়, পালিয়ে বিয়ে করে তারা আহাম্মদ আলীর খালার বাড়ি পূর্বডামুড্যা এলাকায় লুকিয়ে ছিল। দুইদিন পর পরিবার স্থানীয় জনপ্রতিনিধির মাধ্যমে ও পুলিশের সহায়তায় তাদের উদ্ধার করা হয়। আহাম্মদ আলী মালতের পরিবার মেয়েটিকে বউ হিসেবে ঘরে তুলতে চাইলেও শোভার পরিবার এতে রাজি হয়নি। তারা সখিপুর থানায় আহাম্মদ আলী মালতের বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা করে। মামলার পর পুলিশ আহাম্মদ আলীকে গ্রেফতার করে শরীয়তপুর আদালতে পাঠায়।
গত ২৪ নভেম্বর আদালতে আহাম্মদ আলী ও শোভাকে হাজির করা হয়। বিচারক আহাম্মদ আলীকে শরীয়তপুর কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আর শোভাকে তার বাবা-মার কাছে ফিরিয়ে দেন আদালত। কিন্তু এতে শোভা অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়ে। সে বাড়ি ফিরে তার মাসহ অন্যকে মারধর শুরু করে।
মেয়েটির বাবা বলেন, আমার অপ্রাপ্ত বয়স্ক মেয়েকে ফুসলিয়ে অপহরণ করে নিয়ে বিয়ে করে আহাম্মদ। সে মাদকাসক্ত। আমার মেয়েটি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে গেছে। সে তার মাকে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছিল। বতর্মানে শুধু পাগলামি করে। তাই একদিন বেঁধে রেখেছিলাম। এখন চোখে চোখে রাখি। আমার সম্মান শেষ করার জন্য শিকল দেওয়া ভিডিওটি করে ফেসবুকে ছেড়ে দিয়েছে। আমি এটার বিচার চাই। আহাম্মদ আলী মাদক বিক্রি করে, মাদক খায়। তাই ওর কাছে মেয়ে দিয়ে তার জীবনটা নষ্ট করতে চাই না।
আহাম্মদ আলী মালতের মা সুরত নেছা বলেন, ‘দুজনে সম্পর্ক করে পালিয়ে বিয়ে করেছে। এ ব্যাপারে আমরা জানতাম না। উদ্ধার হওয়ার পরে জেনেছি। ছেলে যেহেতু ভুল করে ফেলেছে, তাই মেয়েটিকে বউ হিসেবে ঘরে তুলতে চাইছিলাম। কিন্তু শোভার পরিবার রাজি না হয়ে আমার ছেলেটাকে জেল খাটাচ্ছে।
চরকুমাড়িয়া ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আকতার সরদার বলেন, আহাম্মদ আলী ও শোভা আক্তার বিয়ে করে পালিয়ে গেলে আমরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা তাদের উদ্ধার করি। মেয়ে-ছেলে একসঙ্গে সংসার করতে চাইলেও মেয়ের পরিবার রাজি হয় নাই। আর মেয়ের বয়স অল্প হওয়ায় আমরাও কিছু করতে পারছি না। পুলিশের কাছে ছেলে -মেয়ে উভয়কে তুলে দেওয়া হয়।
সখিপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) হালিম জানান, শোভার বাবা বাদী হয়ে আহাম্মদ আলীর বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশ মতো সব হবে। মেয়েটিকে তার বাবা ও মায়ের জিম্মায় দিয়েছেন আদালত।