বাংলার সময় ১৯ বছর পর হত্যা মামলার শুনানি
০১-১০-২০২০, ২২:৩২
মফিজুর রহমান রিপন

শরীয়তপুরের চাঞ্চল্যকর জোড়া খুনের ১৯ বছর পরে উচ্চ আদালতের নির্দেশে শরীয়তপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতে মামলার শুনানি শুরু হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (০১ অক্টোবর) বিকেলে এ মামলায় চাচা ও বাবার হত্যার বিচার পেতে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন আইনজীবী ছেলে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট মির্জা হযরত আলী ও নিহত হাবিবুর রহমানের ছেলে অ্যাডভোকেট পারভেজ রহমান জন (বর্তমানে মামলার বাদী) জানান, ২০০১ সালের ১ অক্টোবর জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মোবারক আলী সিকদারের সাথে বিএনপির সমর্থিত স্বতন্ত্রপ্রার্থী হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ নির্বাচনে প্রার্থী হন। ভোট গ্রহণের দিন শরীয়তপুর ৮টি কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ স্থগিত হলে তা পুনরায় ৮ অক্টোবর ভোট গ্রহণের দিন ধার্য হয়।
সেই নির্বাচনে সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণের জন্য আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের দায়িত্ব ভাগের জন্য তৎকালীন জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও পাবলিক প্রসিকিউটর হাবিবুর রহমানের বাড়ির আঙ্গিনায় ২০০১ সালের ৫ অক্টোবর একটি জরুরি সভা বসে। সেই সভা চলাকালীন দিনে দুপুরে সতন্ত্রপ্রার্থী হেমায়েত উল্লা আওরঙ্গ এর সমর্থক চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা অ্যাডভোকেট মো. হাবিবুর রহমানের বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে এবং অ্যাডভোকেট মো. হাবিবুর রহমান ও তার সহধর ভাই মো. মনির হোসেন মুন্সীকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে।
সেই দিন রাজনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে বাড়ির ২শ' গজ দুরের পালং থানা পুলিশ রক্ষার্থে এগিয়ে আসেনি। নিরাপত্তার জন্য সন্ত্রাসীদের ভয়ে জীবিত অবস্থায় তাদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে নিতে পারেনি পরিবার। তাদের মৃত্যুর পরে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের মর্গে প্রেরণ করেন।
এরপর অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমানের স্ত্রী মিসেস জিন্নাত রহমান বাদী হয়ে স্বামী ও দেবরের হত্যার বিচার দাবিতে মামলা করেন।
পরে নির্বাচনে হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে প্রভাব বিস্তার করেন। ২০০৩ সালে পুলিশের চার্জশিটে জড়িত আসামিদের নাম বাদ দেওয়া হলে বাদী জিন্নাত রহমান নারাজি দেন। নারাজির দরখাস্ত শরীয়তপুরের আদালতে না মঞ্জুর হলে বাদী উচ্চ আদালতে আবেদন করেন। ২০১৩ সালে মামলাটি পূর্ণ তদন্তের আদেশ দেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল ডিভিশন। পুনরায় তদন্ত করে বাদপড়া আসামিদের নাম ভুক্ত করে পুনরায় চার্জশিট দেন। মামলার বাদী ২০১৭ সালে ব্রেইন স্টোক করে মারা যায়।
অবশেষে বাদীর পক্ষে ছেলে অ্যাডভোকেট পারভেজ রহমান জন আদালতে মামলাটির বাদী হিসেবে দায়িত্ব নেন।
অবশেষে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে ৬ মাসের মধ্যে মামলাটির সাক্ষ্য গ্রহণ নিয়ে রায় প্রদানের নির্দেশ দেন। তারই প্রেক্ষাপটে করোনা পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে বর্তমানে মামলাটির শুনানি শুরু হয়েছে দীর্ঘ ১৯ বছর পরে। বাদী ও রাষ্ট্রপক্ষ আশাবাদী যে জটিলতা কাটিয়ে বর্তমানে যেভাবে মামলাটির শুনানি ও সাক্ষ্য গ্রহণ ও জেরা চলছে এতে ন্যায় বিচার পাবে এবং খুনিদের সর্বোচ্চ বিচার হবে।
উক্ত হত্যা মামলায় নামধারী ও অজ্ঞাত মিলে দেড়শত লোককে আসামি করে হত্যা ও বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় আসামি পক্ষের আইনজীবী মাসুদুর রহমান জানান, বর্তমানে সে ৫৬ জনের জন্য লড়ছেন। তিনিও দাবি করেন প্রকৃত খুনিদের বিচার হোক। কিন্তু কোনো নিরীহ লোক যেন না ফেঁসে না যান। ন্যায় বিচারের আশাবাদ ব্যক্ত করেন আসামী পক্ষের আইনজীবী মাসুদুর রহমান।
বর্তমানে মামলার ১ম আসামি সাবেক সংসদ সদস্য হেমায়েত উল্লাহ আওরঙ্গ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন। এছাড়াও মামলার আরও ২ আসামির মৃত্যু হয়েছে।