সাক্ষাৎকার করোনা সংকটে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ শিক্ষা: চ্যালেঞ্জের সাথে শেখারও আছে অনেক কিছু
১২-০৭-২০২০, ২৩:৪৩
মেহেদী হাসান

আর্থ-সামাজিক অবস্থা তথা জীবন-জীবিকার সকল ক্ষেত্রেই করোনা মহামারির নেতিবাচক প্রভাব সুস্পষ্ট। শিক্ষাক্ষেত্রও থমকে আছে বিশ্বব্যাপী। উন্নত দেশগুলোর পাশাপাশি বাংলাদেশের কিছু কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষকরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। কিন্তু অনেকটাই বাস্তব ও প্রায়োগিক শিক্ষা-পদ্ধতি নির্ভর সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ শিক্ষা কীভাবে অনলাইনে পরিচালনা করা সম্ভব? এ বিষয়ে সময় সংবাদের সাথে কথা বলেছেন মিডিয়া ব্যক্তিত্ব ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগ বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ড. শেখ শফিউল ইসলাম। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মেহেদী হাসান।
সময় সংবাদ: মহামারির এসময়ে দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে থমকে আছে, সেখানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে?
সময় সংবাদ: মহামারির এসময়ে দেশের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেখানে থমকে আছে, সেখানে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কীভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে?
ড. শেখ শফিউল ইসলাম: আপনি জানেন, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি প্রতিষ্ঠাকাল থেকেই ক্যাম্পাসে সরাসরি শিক্ষার পাশাপাশি প্রযুক্তি নির্ভর শিক্ষার উপর জোর দিয়ে আসছে। চলতি বছরের মার্চের প্রথম থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাষ্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান জনাব সবুর খান করোনার প্রাদুর্ভাবের ধরণ দেখে আঁচ করতে পেরেছিলেন যে আমাদের খুব সম্ভব অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম পরিচালনা করেতে হতে পারে। মার্চের ১৪ তারিখের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় তিনি এমনটাই ইঙ্গিত করেছিলেন। তখন থেকেই শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এ বিষয়ে সচেতন করে তোলা ও তাদের সামর্থ্য বৃদ্ধি করার জন্য নানা ধরণের প্রশিক্ষণ আয়োজন করা হয়েছিল। ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির অত্যন্ত সমৃদ্ধ আইটি ও সফটওয়্যার টিম রয়েছে। তারা সার্বক্ষণিক নানা ধরণের অনলাইন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও ব্যবহার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্ব নন্দিত ‘ব্লেন্ডেড লার্নিং সেন্টারের (বিএলসি)’ নিজস্ব ধারায় ব্যবহার করেছে। যেখানে একটিমাত্র অনলাইন প্লাটফর্মেই শিক্ষার্থীরা প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ ও নির্দেশন পেয়ে থাকে।
সময় সংবাদ: শিক্ষার্থীরা কীভাবে সংযুক্ত হচ্ছে?
ড. শেখ শফিউল ইসলাম: শিক্ষার্থীদের দু’ভাবে সংযুক্ত করা হচ্ছে। গুগলমিটে শিক্ষক সরাসরি অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন এবং বিএলসি প্লাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় পাঠ উপকরণ সরবরাহ করছেন। এতে অনলাইন ক্লাসের বাইরেও শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকের যোগাযোগ থাকছে। কোন ক্লাস করতে না পারলেও সে ক্লাসের রেকর্ডেড ভার্সন শিক্ষার্থীরা পরে যেকোনো সময় তা দেখে নিতে পারে। পাশাপাশি কোন অংশ না বুঝলে অনলাইন কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে শিক্ষকের সাহায্য নিতে পারে।
সময় সংবাদ: আপনারা কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
ড. শেখ শফিউল ইসলাম: শিক্ষার্থীদের দু’ভাবে সংযুক্ত করা হচ্ছে। গুগলমিটে শিক্ষক সরাসরি অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছেন এবং বিএলসি প্লাটফর্মের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় পাঠ উপকরণ সরবরাহ করছেন। এতে অনলাইন ক্লাসের বাইরেও শিক্ষার্থীদের সাথে শিক্ষকের যোগাযোগ থাকছে। কোন ক্লাস করতে না পারলেও সে ক্লাসের রেকর্ডেড ভার্সন শিক্ষার্থীরা পরে যেকোনো সময় তা দেখে নিতে পারে। পাশাপাশি কোন অংশ না বুঝলে অনলাইন কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে শিক্ষকের সাহায্য নিতে পারে।
সময় সংবাদ: আপনারা কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
ড. শেখ শফিউল ইসলাম: মহামারীর প্রেক্ষাপটে দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেলে শিক্ষা কার্যক্রম চালানো একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় আমাদের সামনে। তখন বিএলসি প্লাটফর্মকে ব্যবহার করে আমরা সকল শিক্ষা কার্যক্রমকে একটি সুবিন্যস্ত ব্যবস্থাপনার মধ্যে নিয়ে আসি অতি দ্রুত। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ ও সফলভাবে এ প্লাটফর্ম ব্যবহারের জন্য প্রস্তুত করা হয়। আমি আনন্দিত যে, প্রাথমিক চ্যালেঞ্জসমূহ আমরা শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ই বেশ সফলভাবে মোকাবেলা করতে পেরেছি। এ সময় আমরা শিক্ষার মান বজায় রেখে শিক্ষা কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ওপর জোর দিয়েছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের পরিস্থিতি আমরা আরও দক্ষভাবে মোকাবেলা করতে পারব বলে আমার বিশ্বাস। মহামারী-উত্তর সময়েও ক্যাম্পাসে সরাসরি পাঠদানের পাশাপাশি অনলাইন কার্যক্রমও অব্যাহত থাকবে। এতে শিক্ষার্থীরা কখনো ক্লাসে উপস্থিত থাকতে না পারলেও কোর্সের পাঠ বিষয়ে আপডেটেড থাকতে পারবে এবং শিক্ষকের প্রয়োজনীয় সহায়তা গ্রহণ করতে পারবে। এতে শিক্ষা কার্যক্রম আরও পরিপূর্ণতা লাভ করবে।
সময় সংবাদ: অনেক শিক্ষার্থী প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকেন, তাদের নেটওয়ার্ক-দুর্বলতাসহ নানা অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। তারা কীভাবে এ ব্যবস্থার সুবিধা পাচ্ছেন?
সময় সংবাদ: অনেক শিক্ষার্থী প্রত্যন্ত অঞ্চলে থাকেন, তাদের নেটওয়ার্ক-দুর্বলতাসহ নানা অবকাঠামোগত সমস্যা রয়েছে। তারা কীভাবে এ ব্যবস্থার সুবিধা পাচ্ছেন?
ড. শেখ শফিউল ইসলাম: আপনি ভালো প্রশ্ন করেছেন। এটি বলার অপেক্ষা রাখে না যে সব স্থানে সমান অবকাঠামোগত সুবিধা নেই। এই বাস্তবতা মেনে নিয়েই এই মহামারিকালে অনলাইন পাঠদান কৌশল ঠিক করতে হবে। বিএলসি এক্ষেত্রে অত্যন্ত সহায়ক। এটি এমনভাবে সাজানো থাকে যে, কোন শিক্ষার্থী নেটওয়ার্ক দুর্বলতাসহ বিভিন্ন সমস্যার কারণে ক্লাসে যুক্ত হতে না পারলে, সে যেকোনো সময় ক্লাসের রেকর্ড ও সহায়ক উপকরণ পেতে পারে। এর অর্থ হল ক্লাসে সংযুক্ত হতে না পারলেও পড়াশুনা থেকে বিচ্যুত হবে না। এমনকি মেসেঞ্জারে যুক্ত হয়েও কোনো বিষয় বুঝে নিতে পারে।
সময় সংবাদ: আপনি ব্লেন্ডেড লার্নিং সেন্টারের কথা বলছেন, বিষয়টি একটু ব্যাখ্যা করবেন কী?
ড. শেখ শফিউল ইসলাম: ব্লেন্ডেড লার্নিং সেন্টার বা বিএলসি একটি অনলাইন পাঠদান প্লাটফর্ম। লার্নিং ম্যানেজম্যান্ট সিস্টেমের আওতায় বিএলসিতে শিক্ষকদের জন্য আলাদা আলাদা কোর্স খোলা থাকবে। শিক্ষক যে কোর্স পড়াচ্ছেন, বিএলসি সেই কোর্সের পেজে লেসনভিত্তিক বিভিন্ন সহায়ক উপকরণ শিক্ষার্থীদের সাথে শেয়ার করবেন। এখানে কোর্স সামারি, কোর্স অবজেকটিভ, আউটকাম, কোর্সের পূর্ণাঙ্গ সিলেবাস, কোর্স প্লান, এসেসম্যান্ট প্লান, ক্লাস শিডিউলস, রেফারেন্স লিস্ট, প্রত্যেকটা লেসনের জন্য আলাদা চ্যাপ্টার এবং সেখানে লেসন-ভিত্তিক প্রয়োজনীয় রিডিং টেক্সট, অডিও-ভিডিও উপকরণ, এক্সটার্নাল লিংকস শেয়ার করা থাকবে। প্রত্যেকটা লেসনের শুরুতে এর অবজেকটিভ ও আউটকাম সম্পর্কে বলা থাকবে। অনলাইন ক্লাসের রেকর্ড এবং স্লাইডও এখানে শেয়ার করা থাকবে। শিক্ষক প্রত্যেকটা লেসনের জন্য আলাদা শর্ট ভিডিও তৈরী করে বিএলসিতে আপলোড করতে পারেন। কুইজ, বিভিন্ন পরীক্ষা, এসাইনমেন্ট ও প্রেজেন্টেশনের ঘোষণা ও নির্দেশনা আগে থেকেই শেয়ার করবেন। এখানে শিক্ষক প্রত্যেকটা লেসনের জন্য আলাদা আলাদা একটিভিটি তৈরি করবেন। কোর্স শিক্ষক এই প্লাটফর্ম ব্যবহার করে কুইজ, এসাইনমেন্ট ইত্যাদি তৈরি করতে পারবেন। শিক্ষার্থীরা কোর্স পেজে গিয়ে কুইজ ও এসাইনমেন্টে অংশ নিতে পারবে। এবং সেগুলোর গ্রেডিংও শিক্ষক এখান থেকে করবেন । গ্রেডিং-এর পর শিক্ষার্থীরা সাথে সাথে জানতে পারবে। এখানে ফোরাম থাকে যার মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থী যেকোন পাঠ বিষয়ে নিজস্ব বক্তব্যও শেয়ার করতে পারেন। এতে ক্লাসের বাইরেও শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর মাঝে একটা মিথস্ক্রিয়ার সম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব কিছুর মূল উদ্দেশ্য হল শিক্ষার্থীরা সংশ্লিষ্ট কোর্সের প্রয়োজনীয় সমস্ত কিছু একটি জায়গা থেকে পাবে। তাকে বিভিন্ন জায়গায় ঘোরাঘুরি করতে হবে না। এ ক্ষেত্রে কোন শিক্ষার্থী অংশগ্রহণে পিছিয়ে থাকলে শিক্ষক তার ব্যাপারে আলাদাভাবে খোঁজ নিতে পারেন।
সময় সংবাদ: আমরা জানি, গণযোগাযোগও সাংবাদিকতা বাস্তব ও প্রায়োগিক শিক্ষা-পদ্ধতি নির্ভর। এটি কীভাবে অনলাইনে পরিচালনা করছেন?
সময় সংবাদ: আমরা জানি, গণযোগাযোগও সাংবাদিকতা বাস্তব ও প্রায়োগিক শিক্ষা-পদ্ধতি নির্ভর। এটি কীভাবে অনলাইনে পরিচালনা করছেন?
ড. শেখ শফিউল ইসলাম: আপনারা জানেন সংকটে সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগের গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়। করোনাকালেও তাই হয়েছে। মানুষের গণমাধ্যম নির্ভরতা বেড়ে গেছে। মানুষের এই চাহিদা পূরণের জন্য সংবাদকর্মীরা রাতদিন পরিশ্রম করছেন। নির্ধারিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং প্রযুক্তির সহায়তায় তারা এ কাজগুলো করছেন। সাংবাদিকতার প্রথম পাঠ হল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে শেখা। আমি মনে করি প্রযুক্তি সারা বিশ্বকে এতটা কাছে নিয়ে এসেছে যে, দৈহিক দূরত্ব থাকলেও যোগাযোগের দূরত্ব আর নেই। আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা মূলত: প্রযুক্তিনির্ভর। সাংবাদিকতা ও গণযোগাযোগের শিক্ষার্থীরা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তাদের প্রায়োগিক বিদ্যার চর্চা করবে। এতে যোগাযোগ প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা যেমন বাড়বে, তেমনি সংকটকালীন কাজ করার জন্য যে প্রবলেম-সলভিং মাইন্ড দরকার, তাও তৈরি হবে।
সময় সংবাদ: বাংলাদেশ অনলাইন শিক্ষায় পিছিয়ে আছে, কীভাবে আরও অগ্রসর হওয়া যায়?
সময় সংবাদ: বাংলাদেশ অনলাইন শিক্ষায় পিছিয়ে আছে, কীভাবে আরও অগ্রসর হওয়া যায়?
ড. শেখ শফিউল ইসলাম: বাংলাদেশে সামগ্রিক বাস্তবতার দিকে থাকলে আমরা দেখি দেশের অধিকাংশ শিক্ষার্থী অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমের সাথে যুক্ত নয়। সবাইকে এর সাথে যুক্ত করতে হলে অবকাঠামোগত দুর্বলতা দূর করতে হবে। প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করতে হবে এবং মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। সাফল্য পেতে হলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি সরকার ও বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানকেও এগিয়ে আসতে হবে।
সময় সংবাদ: আপনাকে ধন্যবাদ।
ড. শেখ শফিউল ইসলাম: আপনাকেও ধন্যবাদ।